News Details
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ ধরণের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে।
এগুলো হলোঃ-
১) ভাষা ও যোগাযোগ:
ভাষার দক্ষতা চারটি— শোনা, বলা, পড়া, লেখা। আর ভাষা হলো যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।
২) গণিত ও যুক্তি:
প্রাথমিক গণিত শিক্ষার লক্ষ্য হলো এই স্তরের শিক্ষার্থীদের কল্পনা, কৌতূহল, সৃজনশীলতা ও বুদ্ধির বিকাশে প্রয়োজনীয় গাণিতিক ধারণা ও দক্ষতা অর্জন এবং যৌক্তিক চিন্তার মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারা।
৩) জীবন ও জীবিকা:
আগামী প্রজন্মকে দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়ানো হবে ‘জীবন ও জীবিকা’ নামে নতুন একটি বিষয়। এটির পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীই কোনো একটি পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি ব্যবহারিক অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারে। স্থানীয় চাহিদা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী বিদ্যালয় বা শিক্ষার্থীর নিজ নিজ এলাকায় উপার্জনসংশ্লিষ্ট কাজে অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। এমনকি উদ্যোক্তা হিসেবে ছোটখাটো বিনিয়োগের অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারবে নতুন যুক্ত হওয়া ‘জীবন ও জীবিকা’ বিষয়টি শিখনের মাধ্যমে।
৪) সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব:
রাষ্ট্রের আইন-কানুন দ্বারা নির্ধারিত যেসব কর্তব্য নাগরিকের পালন করা অপরিহার্য তাকে আইনগত কর্তব্য বলে। রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের কর্তব্যগুলো হলো আইন মান্য করা, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা, ভোটাধিকার প্রয়োগ করে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা, কর প্রদান, সন্তানদের সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা, রাষ্ট্রের সেবা করা ইত্যাদি।
৫) পরিবেশ ও জলবায়ু:
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশদূষণ, খাদ্যাভাব, কর্মসংস্থানের সংকট প্রভৃতি নানা সংকটের আবর্তে পৃথিবী নিপতিত। সাম্প্রতিক কালে উষ্ণায়ন এবং তৎসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। তবে বর্তমান উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এত উদ্বেগ ও আলোচনার কারণ কোনো প্রাকৃতিক উপাদান নয়, বরং মানুষের প্রকৃতিবিরুদ্ধ নানাবিধ অপকর্মের ফলস্বরূপ বায়ুমণ্ডলের ক্ষতিকারক গ্যাস, বিশেষ করে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রার সংকটজনক বৃদ্ধি গোলকীয় উষ্ণায়নের প্রধান কারণ। তাই বলা হয়, জলে-স্থলে বায়বিক অবস্থা বা আবহাওয়ার যে পরিবর্তন আসে, এগুলো মানুষের হাতের দ্বারাই সৃষ্ট।
৬) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি:
বিজ্ঞান হলো প্রযুক্তি-সম্পর্কিত জ্ঞান। বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যাখ্যা এবং বর্ণনা করে। ১. প্রযুক্তি হলো আমাদের জীবনের বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানের জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ।
৭) তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি:
প্রকৃতপক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এক ধরনের একীভূত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও তৎসম্পর্কিত এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার, মিডলওয়্যার তথ্য সংরক্ষণ, অডিও-ভিডিও সিস্টেম ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত এমন এক ধরনের ব্যবস্থা যার মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী খুব সহজে তথ্য গ্রহণ, সংরক্ষণ, সঞ্চালন ও বিশ্লেষণ করতে পারে।
৮) শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা:
কিশোর মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার সমাধান না করা পরবর্তী জীবনে প্রভাব ফেলে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মতো পরিপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ সীমিত করে। মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলির লক্ষণগুলি স্বীকৃতি দেওয়া এবং আপনার বা প্রিয়জনের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
৯) মূল্যবোধ ও নৈতিকতা:
মূল্যবোধ শিক্ষা ব্যক্তিকে দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে সুশাসনের ভিত্তিকে মজবুত করে। মূল্যবোধ ও সুশাসন জাতীয় ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সাংবিধানিক অধিকার, জাতীয় সংহতি, সমাজের উন্নতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে। মূল্যবোধ ও সুশাসনের প্রভাব জাতীয় জীবনে সহনশীলতা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।
১০) শিল্প ও সংস্কৃতি:
বাংলাদেশের লোক ও কারুশিল্প এ দেশের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারুশিল্পের বিশাল ভান্ডারে রয়েছে জামদানি, সতরঞ্জি, ধাতব শিল্প, শঙ্খ শিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, ঝিনুক শিল্প, পুতুল শিল্প, পিতল-কাঁসা শিল্প, বাঁশ-বেত শিল্প, শোলা শিল্প ইত্যাদি।!